মোঃ হাবিবুর রহমান, রবীন্দ্র বিশ্বববিদ্যালয়: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে অংশীজনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন-১ এর লেকচার থিয়েটারে বিকাল ৪টায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম। আরো উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদ, রেজিস্ট্রার জনাব মোঃ সোহরাব আলী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. ফখরুল ইসলাম, সকল বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষকবৃন্দ ও কর্মকর্তাগণ।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শাহজাদপুরের মানুষের দৃষ্টির একটি কেন্দ্রবিন্দু। এই বিশ্ববিদ্যালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন এবং  ২০১৭ সাল থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। নানান সংকট অতিক্রম করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এখন অগ্রসরমান। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স যখন পাঁচ বছর অতিক্রান্ত, সে সময় আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি। এসে দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। নানা মানুষের নানা নেতিবাচক ধারণা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির সংকট, অন্য একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে শিক্ষক -শিক্ষার্থীদের সহায়তায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমকে সচল ও গতিমান করেছি সর্বাগ্রে, ক্রমান্বয়ে শিক্ষার মানকে উন্নত করেছি, ছাত্র-ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক মান, নৈতিক অবস্থা এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি।
২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটিয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে এবং পরবর্তী বছরের শিক্ষা কার্যক্রম শেষে ২০২২ এর নভেম্বরে চূড়ান্ত  পরীক্ষাও যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা তিনটি বিভাগের গ্যাজুয়েট তৈরীর কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি, যার ফলে মনে হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এর রূপলাভ করেছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে সকল সংকটকে তুচ্ছ করে যেখানে যা প্রয়োজন সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই-কিউ এসি সেলকে উজ্জীবিত করেছি তা এখন পূর্ণ উদ্দ্যমে কাজ করছে, শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা ও আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা একটি উন্নত মানের সেমিনার ভেন্যু তৈরি করেছি যা লেকচার থিয়েটার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে, সংগীত বিভাগের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পরিচালনার জন্য আমরা একটি উন্নত মানের স্টুডিও থিয়েটার তৈরি করেছি, আমরা অ্যাকাডেমিক ক্যাম্পাস-২ তে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করেছি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে আমরা লাইব্রেরি সুবিধা সম্প্রসারণ করেছি– প্রতিদিন রাত ৮ পর্যন্ত  এবং শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও সারাদিন লাইব্রেরি খোলা থাকে। ,আমরা অ্যাকাডেমিক ভবন-১-এ গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি।
উপাচার্য বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সাংস্কৃতিক পুণ্যভূমি  হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা অত্যন্ত বৃহৎ আয়জনে, জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক দিন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করেছি, আমরা মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছি, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠান করেছি, আমরা বইমেলার আয়োজন করেছি, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সংযুক্ত রাখার জন্য সংঘভিত্তিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেছি। যার ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি ক্লাব নির্মাণ করেছি, এই ক্লাবগুলোর ছন্দময় পরিবেশনার মাধ্যমে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ পেয়েছে। তিনি বলেন, এসব কিছুর বাইরেও আমরা মনে করি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশের প্রতি, কমিউনিটির প্রতি একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে, যার ফলে এই অঞ্চলের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তা পুননির্মাণ ও বেগবান করার দায়িত্বও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নিজের কাঁধে নিয়েছে, এই ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বকুলতলা মঞ্চ আমরা পুনরুদ্ধার করেছি এবং সেখানে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারি-২০২২ পালন করেছি।
উপাচার্য মহোদয় বলেন,  আমরা আমাদের প্রধান লক্ষ নির্ধারণ করেছি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মান করা, সেজন্য আমরা নিরলস পরিশ্রম করে একটা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ইউজিসিতে জমা দেই, ইউজিসি তা অনুমোদন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হয়ে একনেকে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তিনি বলেন, কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ সুদৃঢ় করা এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে আমরা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি, আমরা বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া  প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। 
তিনি বলেন, আমরা গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সেইক্ষেত্রে এবারই প্রথম শাহজাদপুরে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছি। যার ফলে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজগুলো করার অভিজ্ঞতা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়েছে। শুধুমাত্র একটি ক্যাম্পাসের অভাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছন্দময় অভিযাত্রা শতভাগ দেখাতে পারছি না। যে বিশ্ববিদ্যালয়টি একজন নোবেলজয়ী সাহিত্যিকের নামে প্রতিষ্ঠিত, যে বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে স্থাপিত হলো সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্যাচ ক্যাম্পাস ছাড়া বাহির হয়ে যাবে তা দুঃখজনক। এরমধ্যে দিয়েও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের জন্য কাজ করার, আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের জায়গায় ছন্দময় পদচারণা করতে পারে সেই সুযোগটি তারা নিশ্চয়ই পাবেন, সেক্ষেত্রে সরকার নিশ্চয় সদয় হবেন।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমি ভারত সফর করেছি এবং সেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের আমন্ত্রণে বিজয় দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি, সেখানে বিশেষ করে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মানুষের যে অভিমত ও মূল্যায়ন তা অত্যন্ত উচ্চমানের, সেখানে আমি ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি  ইনস্টিটিউটে (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী, রবীন্দ্র ভারতী এবং ইস্টার্ন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড লার্নিং ইন ম্যানেজম্যান্ট, কলকাতা)  বক্তৃতা ও মতবিনিময় করেছি।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় কমিউনিটির প্রতিনিধিগণের সাথে আমরা একটা সভা করছি সেই সভাতে আপনাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান আপনাদের যদি কোন সুযোগ থাকে আপনারা সেই সহযোগিতার হাত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বাড়িয়ে দিবেন।
এর আগে বেলা ৩.০০টায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম- এর সভাপতিত্বে  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।